লাঙ্গলবন্দ ব্রহ্মপুত্র নদ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে: পবিত্র নদ ব্রহ্মপুত্রে স্নান করে পাপ থেকে মুক্তি লাভের আশায় বুধবার রাত থেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীস্নান করতে আসেন কয়েক লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বুধবার দিনগত রাতে শুরু হচ্ছে মহাঅস্টমী স্নানোৎসব। রাত ২টা ৭মিনিট ২ সেকেন্ড থেকে তিথি শুরু হয়ে শেষ হবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৪৭মিনিট ২৭ সেকেন্ডে। চৈত্র মাসের অষ্টম তিথিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এ ধর্মীয় আয়োজনে বাংলাদেশসহ এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। উপচে পড়া মানুষের ভিড় ঠেলে স্নানঘাটে এসে পূণ্যপ্রত্যাশীরা সুষ্ঠুভাবে স্নান সমাপ্ত করতে পারলেও তারা চান এ দুর্ভোগের একটি স্থায়ী সমাধান।
তাদের অভিযোগ, সরকার একটু উদ্যোগী হলেই এখানকার অব্যবস্থাপনার সমাধান করা যায়। আর সেরকম হলে লাঙ্গলবন্দ পর্যটন নগরী হিসেবেও খ্যাতি পাবে বলে মনে করেন তারা।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তীর্থস্থানকে কেন্দ্র করে সরকারি উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। তীর্থস্থানে ভক্তদের জন্য থাকে স্বাচ্ছন্দ ও সাবলীল উপাসনার ব্যবস্থা। কিন্তু লাঙ্গলবন্দ তীর্থস্থান যেন ভক্তদের ভোগান্তির আরেক নাম। বিপুল লোকের তুলনায় স্নান ঘাটগুলোতে আসবার একটি মাত্র সরু রাস্তা, টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, মানুষের তুলনায় স্নানঘাটের স্বল্পতা, স্নান শেষে ভেজা কাপড় পাল্টানোর পর্যাপ্ত জায়গা ও বিশ্রামের জায়গার অভাব, লাঙ্গলবন্দের বিপুল পরিমাণ দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল, ব্রক্ষপুত্র নদ বেদখল ও নাব্যতা কমে যাওয়া, নদে কচুরিপানা-আগাছা বৃদ্ধিসহ সমস্যার যেন শেষ নেই লাঙ্গলবন্দে। লাঙ্গলবন্দে অষ্টমীস্নানে আসা পুর্ণার্থীদের এসব দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় লাঙ্গলবন্দে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ তীর্থক্ষেত্র স্থাপন ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে সময়ের ধর্ম উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিলো— স্নানকাজ সম্পন্ন করার সু-ব্যবস্থা করা, এ স্থানকে আকর্ষণীয় করে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিকল্পিত ছায়াবিথী গড়ে তোলা, স্নান উৎসব এলাকার প্রায় ৩ কিলোমিটার স্থানে রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ানো, ব্রহ্মপুত্র নদ পুনঃখনন, স্নান ঘাট সংস্কার, স্নান শেষে কাপড় পাল্টানোর স্থায়ী জায়গা তৈরি, ঘাটগুলোতে ছাউনি তৈরি, জরাজীর্ণ মন্দিরগুলোর সংস্কার, পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই তীরে গাইড ওয়াল নির্মাণ, পিকনিক স্পট, শিশুপার্ক, মোটেল, তীর্থ যাত্রী নিবাস, একাধিক সংযোগ সড়ক নির্মাণ, সংলগ্ন খাল খনন, পর্যাপ্ত শৌচাগার নির্মাণ ও খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো।
প্রায় ৪৬ একর জমিতে ‘আমব্রেলা প্রজেক্ট’ নামের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু সে প্রকল্প আর এগোয়নি। জেলা পরিষদের প্রশাসক কাজী মেরাজ বাংলানিউজকে জানান, ১৪ টি স্নানঘাটের জন্য ২৮টি চেঞ্জিং রুম তৈরি করা হয়েছে। নদীর প্রবাহ ভালো। স্নানঘাটসহ যাতায়াত পথে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, ৭০টি টয়লেট, ২৫টি পানির ট্যাংকি, ৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ৩৩টি সেবাশ্রমের মাধ্যমে আগত ভক্তদের মাঝে খাবার বিতরণের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পর্যাপ্ত চাল অনুদান দেওয়া হয়েছে।