চট্টগ্রাম : জামায়াত নেতা মাওলানা সাঈদীর ফাসিঁর আদেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ৬ দিন ধরে সড়ক অবরোধ ও তান্ডবলীলার পর এবার ১১ মামলা আসামী হয়ে সাতকানিয়া ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার জামায়াত শিবির কর্মী। তাদের বিরোদ্ধে পুলিশসহ ক্ষতিগ্রস্থ্য লোকজন বাদী হয়ে ৮ মার্চ পর্যন্ত ১১টি মামলা করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার জামায়াত দেশব্যাপী হরতাল পালন করে।
সেদিন জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার সংবাদ পাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যেই কেরানীহাট, সাতকানিয়া রাস্তার মাথা, হাসমতের দোকান, টাইম ক্যাফে, মিঠাদিঘী, শিশুতল, ঠাকুরদিঘী প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের সহিংস কর্মীরা। তাদের সাথে যোগ দেয় অনেক সাঈদীভক্ত। এরা মুহুর্তেই ১০/১৫টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মহাসড়কের আশপাশের সকল দোকানপাটের কাঁচ ভেঙ্গে চুর্ণবিচুর্ণ করে দেয়। জ্বালিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি। হামলা থেকে বাদ পড়েনি পুলিশের গাড়িও। অনেক জামায়াত সমর্থক ব্যা্িক্তর গাড়ি এবং প্রতিষ্ঠানও হামলার শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। কিন্ত‘ এতে অবস্থা আরো বেগতিক হয়ে উঠে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আরো বেশী বেসামাল হয়ে পড়ে। তারা মহাসড়কে আরো কঠোর অবরোধ সৃষ্টি করে। শুক্রবার এবং শনিবার কোন হরতালের কর্মসূচী না থাকলেও তারা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় কড়া অবরোধ পালন করে। শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ভয়-আতঙ্কে সাধারণ লোকজন বাড়ি হতে বের হবার সাহসই পায়নি। মহাসড়কের উভয় পাশের বড় বড় গাছ কেটে রাস্তার উপর এমন কড়া বেরিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে যা সরাতে পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি, র্যাবসহ সবাইকে হিমশিম খেতে হয়েছে। রবি ও সোমবার ছিল জামায়াতের ঘোষিত হরতাল। সেই দু‘দিনেও তারা সমগ্র উপজেলা অবরুদ্ধ করে রাখে। লোহাগাড়ায়ও বিরাজ করে সমান পরিস্থিতি। মঙ্গলবার বিএনপির হরতালেও দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা বিরাজ করেছিল সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়। এই সংঘাতমুখর দিনসমূহের মধ্যে বৃহস্পতিবার লোহাগাড়ায় পুলিশসহ ২জন এবং ২ মার্চ সাতকানিয়ায় আরো ৩জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সাতকানিয়ায় সংঘটিত ঘটনাসমূহের প্রেক্ষিতে পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ বাদি হয়ে ৮ মার্চ পর্যন্ত সাতকানিয়া থানায় ১১টি মামলা দায়ের করেছে। শনিবার নতুন কোন মামলা দায়ের হয়নি। তবে আরো মামলা দায়েরের অপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে। দায়েরকৃত মামলাসমূহে ১৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে হাজার হাজার। গত ১মার্চ এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদি হয়ে দায়েরকৃত ১ নং মামলায় নামীয় আসামি রয়েছে ৯১জন। অজ্ঞাতনামা ৪/৫হাজার। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই ইয়াসির আরাফাত। ২ মার্চ এসআই নাজমুল হক বাদি হয়ে দায়েরকৃত ২ নং মামলায় নামীয় আসামি রয়েছে ৩৬জন। অজ্ঞাতনামা প্রায় আড়াই হাজার। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই ফরিদ আহমেদ। ৫মার্চ ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনামুল হক বাদি হয়ে দায়েরকৃত ৩ নং মামলার সকল আসামি অজ্ঞাতনামা। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই কামাল আব্বাস। একই দিন কালিয়াইশের জনৈক আবুল হোসেন মিয়াজি বাদি হয়ে দায়েরকৃত ৪ নং মামলার নামীয় আসামি ১৪জন। অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০জন। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই জুলুশ খাঁন পাঠান। ৭মার্চ দক্ষিণ গারাঙ্গিয়ার নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে দায়েরকৃত ৬ নং মামলার মোট আসামি মাত্র ৩জন। তারা হলো: মুরাদ, মফিজ ও হেলাল। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার। একই দিন ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা অব্দুল আজিজ বাদি হয়ে দায়েরকৃত ৭নং মামলার সকল আসামিই অজ্ঞাত। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই প্রভাত কর্মকার। একই দিন কেরানীহাট শাহ আমানত হাসপাতালের এমডি আব্দুস সালাম বাদি হয়ে ১৪জন নামীয় ও ৩০০/৩৫০জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই জসিম উদ্দিন। ৮ মার্চ চরতি রুপনগরের বাবু রতন বড়–য়া বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৯ নং মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই রেজাউল করিম মজুমদার। একই দিন সওজ দোহাজারির উপ সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১০নম্বর মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই শেফায়েত আহমেদ। একই দিন এসআই নাজমুল হক বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১১ নং মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই তাজুল ইসলাম। একই দনি এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১২ নং মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই নাজমুল হক। এসব মামলায় অন্তর্ভূক্ত হওয়র পর অনেক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী এখন ঘরছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের বিক্ষোভেও ভাটা পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল পালিত হয়েছে ঢিলেঢালাভাবে। যেখানে শুক্র ও শনিবার অঘোষিত অবরোধে পথে পথে শত শত বেরিকেড ও হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল ছিল সেখানে বৃহস্পতিবারের হরতালে কোন পিকেটার চোখে পড়েনি। গত শুক্রবার বিক্ষোভ কর্মসূচী কেরানীহাটে পালিত হয়নি। উপজেলার ৫/৬টি গ্রামীণ স্পটে পালিত হয়েছে দায়সরাভাবে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছে। জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে সত্যিকার অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ পরিদশর্ক (তদন্ত) মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলায় এ পর্যন্ত মোট কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।