মুহাম্মদ দিদারুল আলম (মিরসরাই প্রতিনিধি) : আবদুর রশিদ মিরসরাইয়ের একটি সংগ্রামী মানুষের নাম। অভাব অনটন, কোনো বাঁধা তার জীবনে পথে কাঁটা হতে পারেনি। সাহস, বুদ্ধি, পরিশ্রম দিয়ে জয় করলেন অভাব নামক দানবকে। গ্রামের মানুষের মাঝে একটি কুসংস্কার আছে, ঝাড় দেখে যে ব্যক্তি দিনের শুরু করে, সে ব্যক্তির ওই দিন ভাল যায় না। কিন্তু বিধাতা এ ঝাড়ফুল দিয়ে কারো কারো ভাগ্যবদলের পথ করে দিয়েছেন।
তেমনি একজন ভাগ্যবান আবদুর রশিদ(৪৮)। ছয় ছেলে মেয়ে নিয়ে যখন জীবন কাটছে অর্ধাহার, অনাহারে ঠিক তখনি তার জীবনে ঝাড়–ফুল হয়ে আসে আলাদিনের প্রদীপ। ঝাড়ফুল দিয়ে আজ রশিদ লাখোপতি। আবদুর রশিদর বাড়ি উপজেলার ৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের সুফিয়া রোড এলাকায়। সম্প্রতি আবদুর রশিদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ছয় ছেলে মেয়েকে দিয়ে জীবন কাটছিল দুর্বিসহভাবে। অভাব নামক দানবটি তখন তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। অন্যের জমিতে কাজ করে যা পাওয়া যেত তা দিয়ে নয় সদস্যের পরিবার চালানো ছিল রীতি মতো ঢাল-তরোয়ালহীন যুদ্ধ। একদিন পাহাড়ে থেকে ঝাড়ফুল এনে বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়। এভাবে বেশ কয়েক মাস বিক্রি করা পর মাথায় এলো অন্য বুদ্ধি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঠুরিয়াদের কাছ থেকে ঝাড়ফুল কিনে স্থানীয় বাজারে অল্প লাভে বিক্রি করতেন তিনি। প্রথমে বেশি পুঁজি না থাকায় বেশ হিমশিম খেতে হয় তাকে। পরে আত্মীয় স্বজন ও দাদনের কাছে থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা নিয়ে শুরু হয় অন্য জীবন। এরি মধ্যে উপজেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের ঝাড়ফুল সরবরাহ করতে থাকেন তিনি। ঝাড় ব্যবসায়ীরা তার সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঝাড়ু প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগন আবদুর রশিদকে অগ্রীম টাকা দিয়ে ঝাড়ফুল সরবরাহ করে। ধীরে ধীরে আবদুর রশিদের ভাগ্য খুলতে শুরু করে। তিনি ঠিক করেন তার ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারিত করবেন। তাই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সাত লাখ টাকা নিয়ে এবছর ঝাড়ফুল ব্যবসায় পুঁজি খাটান। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠুরিয়াদের কাছ থেকে ঝাড়ফুল সংগ্রহ করেন তিনি। একশ ফুল ৫০-৬০ টাকা দিয়ে কিনে পরে ঝাড়ফুলগুলো রোদে শুকিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরের ঝাড়– প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট শতকে ১০-১৫টাকা লাভে বিক্রি করা হয়। এভাবে তিনি এখন লাখপতি। বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েকে। লেখাপড়া শেখাচ্ছেন এক ছেলে ও দুই মেয়েকে। তিনি জানান,লোন শোধ ও খরচ মিটিয়ে এ বছর তার প্রায় তিন লাখ টাকা লাভ হবে। তবে আগের মতো এখন ঝাড়ফুল পাওয়া যায় না।