মিরসরাই(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মিরসরাই লতিফীয়া কামিল মাদ্রাসায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদের পলেস্তার খসে পড়ছে। পরিত্যক্ত ওই ভবনে প্রতিনিয়ত মরণফাঁদে পরীক্ষা দিচ্ছে আলিম পরীক্ষার্থীরা। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে প্রতিনিয়তই আতঙ্কের মাঝে শিক্ষকদের পাঠদান করতে হয়। যেকোন সময় ঝুঁকিপূর্ণ ছাদ ধসে প্রাণহাণীর আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, ১৮৮৪ সালে উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে শাহ সুফী মাওলানা আব্দুল লতিফ মিরসরাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অদ্যাবদি সুখ্যাতি অর্জন করেছেন অসংখ্যা বুজুর্গ, আলেম ও সুফি সাদেক। ১৯৭৫ সালে নির্মিত মাদ্রাসা ভবনটির পলেস্তার খসে পড়া শুরু হয়েছে বছর দশেক আগে। গত পাঁচ বছর যাবত ভবনের বিভিন্ন অংশে ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবন সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ ভবনটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও ওই ভবনে চলছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসা, মিঠাছরা ফয়েজ আম সিনিয়র মাদ্রাসা, সুফিয়া নুরীয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও মিরসরাই লতিফীয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ক্লাস চলাকালীন সময়ে পরিত্যক্ত ভবনের ছাদের আংশিক ধসে পড়ে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগামী দিনগুলোতে হতাহতের ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বিতল ভবনের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষের ছাদের পলেস্তার ও ঢালাই খসে পড়েছে। ছাদে ও দেয়ালে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় ফাটল। ওই ভবনে পরীক্ষা দিচ্ছে আলিম পরীক্ষার্থীরা।
আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন, সুফিয়া নুরীয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন, রহিম উদ্দিন, আজমল হুদা, মিরসরাই লতিফীয়া কামিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী জাবেদ হোসেন জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা আলিম পরীক্ষা দিচ্ছি। যে কোনে মুহুর্তে ভবনটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভবন ধস আতঙ্কে রয়েছি, পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে দিতে পারছি না।
শিক্ষার্থীরা আরো জানান, যে স্থানে বড় ফাটল সেখান থেকে একটু দুরে বসে ক্লাস করতে হয়। ক্লাস করার সময় প্রায়ই পলেস্তার খসে শরীরে পড়ে। বেঞ্চ, টেবিলে ছাদের খসে পড়া পলেস্তারের ময়লার জন্য বসা যায় না। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে।
ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনে উপাধ্যক্ষ মাওলানা নুরুন নবী ফারুকীসহ প্রভাষকরা অফিস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাধ্যক্ষের কক্ষের পলেস্তার খসে পড়ে ছাদের রড দেখা যাচ্ছে।
উপাধ্যক্ষ মাওলানা নুরুন নবী ফারুকী বলেন, ‘জরাজীর্ণ এই ভবনে আতঙ্কে থাকি। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা একরামুল হক জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মাদ্রাসাটি আজৌ অযতœ অবহেলার শিকার। তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায়ও নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ধসে পড়ে হনন হতে পারে অজস্র প্রাণ। তিনি শ্রীঘ্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান লিখিতভাবে জানালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। তিনি আরো বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।