Tuesday, 26 February 2013

মিরসরাইয়ের সাংবাদিক জাফরুল ইসলাম আর নেই

মিরসরাই প্রতিনিধি : ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চট্টগ্রামে শহীদ মিনার নির্মাতা,প্রগতিশীল গণআন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও কীর্তিমান সাংবাদিক কাজী জাফরুল ইসলাম আর নেই। মঙ্গলবার(২৬ ফেব্র“য়ারি) ভোর সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকায় বৌদ্ধমন্দির সড়কে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রায়াত জাফরুল ইসলামের ভাগ্নে ও সাংবাদিক হাসান নাসির জানান, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
তিনি বেশ কিছুদিন ধরে দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন আমেরিকায় ছেলে কাজী জাহিদুল ইসলামের বাসায় অবস্থান করে গত ২০ ফেব্র“য়ারি তিনি দেশে ফেরেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ১৯৩৯ সালে জন্ম নেয়া এ সাংবাদিকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলার হাইদকান্দি গ্রামে।প্রায়াত এ সাংবাদিকের দীর্ঘসময়ের সহকর্মী ও দৈনিক আজাদীর সহকারী সম্পাদক সিদ্দিক আহমেদ জানান, পাকিস্তান আমলে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে হাতেখড়ির মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল রাজনীতি শুরু করেন কাজী জাফরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে তার অপরিসীম অবদান ছিল। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ খেলাঘর চট্টগ্রাম জেলা কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও একাত্তরে ভূমিকা পালন করেন জাফরুল ইসলাম। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণে নেতৃত্ব দেন তিনি। এরপর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করে ব্যাপকভাবে মহান ২১ শে ফেব্র“য়ারি পালন শুরু হয়। শুধুমাত্র শহীদ মিনার নির্মাণের কারণে জাফরুল ইসলাম বাঙালির ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন সিদ্দিক আহমেদ। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদ উল আলম জানান, ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদীতে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন জাফরুল ইসলাম। এরপর কিছুদিন দৈনিক সংবাদে কাজ করেন। এরপর আবারও আজাদীতে ফিরে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত সেই কর্মস্থলেই ছিলেন জাফরুল ইসলাম।৪০ বছরের টানা সাংবাদিকতা জীবনে জাফরুল ইসলাম একাধিকবার চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সাংবাদিক কাজী জাফরুল ইসলামের মরদেহ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আনা হয়। এসময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।সাংবাদিক হাসান নাসির জানান, প্রয়াত জাফরুল ইসলামকে মঙ্গলবার বাদ আসর তার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।