আমজাদ হোসেন : আগাম বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ সয়াবিন উৎপাদন জোন লক্ষ্মীপুর। পানির নিচে জেলার কমলনগর ও রামগতি উপজেলার শত কোটি টাকার সয়াবিন। এতে নিঃস্ব হয়ে গেছে ওই দুই উপজেলার হাজার হাজার সয়াবিন চাষি। একই সঙ্গে কৃষিবীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পুরোপুরি ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশের নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে খ্যাত সয়াবিনের প্রধান উৎপাদনস্থল লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতির উপকূলীয় অঞ্চল। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর কমলনগরে ১৭ হাজার ২৩০ হেক্টর এবং রামগতির ১৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭০ হাজার টন। বর্তমানে প্রতি টন সয়াবিনের স্থানীয় বাজারমূল্য সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। সয়াবিন চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ওই দুই উপজেলার লাখো প্রান্তিক কৃষক। প্রতি বছর বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি উৎপাদিত সয়াবিন কৃষকের ঘরে ওঠে। কিন্তু চলতি বছরে সয়াবিন সংগ্রহের মৌসুমে হঠাৎ দেখা দেয় আগাম বর্ষা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। এ দুয়ের প্রভাবে অতিরিক্ত বর্ষণে কৃষকের উৎপাদিত হাজার হাজার একর জমির সয়াবিন বর্তমানে পানির নিচে। ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমার কারণে সয়াবিন চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরা এখন দিশেহারা। এমনই এক হতভাগা কৃষক কমলনগরের দক্ষিণ মার্টিন গ্রামের মো. আলী হোসেন (৫০)। তিনি ইতিপূর্বে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সয়াবিন বীজ উৎপাদনকারী চাষির খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আলী হোসেন বলেন, 'এ বছর আমি ৪০ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছিলাম। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ টন। আমার উৎপাদিত সব সয়াবিনই বিএডিসির বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এবার মাত্র এক টন ফলন সংগ্রহ করার পরই আগাম বর্ষায় বর্তমানে আমার সব সয়াবিন পানির নিচে।' তিনি বলেন, '৪০ একর জমিতে সয়াবিন চাষের জন্য আমি প্রায় ৮ লাখ টাকা কৃষিঋণ নিয়েছে। এখন ঋণের টাকা শোধের চিন্তায় আমি দিশেহারা।' আলী হোসেনের মতো দিশেহারা মধ্য মার্টিন, পূর্ব মার্টিন, উত্তর মার্টিন ও উত্তর লরেঞ্চ এলাকার হাজার হাজার সয়াবিন চাষি। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক ভুঁইয়া বলেন, 'এবার সয়াবিনের সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছিল। তাই উপজেলা কৃষি অফিস আশা করেছিল, এবার সয়াবিন উৎপাদনে অতীতের সব লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অথচ আগাম বর্ষায় উড়ে গেছে কৃষকের সব স্বপ্ন। আমাদের হিসাবমতে, কৃষকরা এখনও অর্ধেক ফলন ঘরে তুলতে পারেনি। ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধেক ফলনের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় একশ' কোটি টাকা। তার চেয়েও বড় কথা, নিম্নমানের কারণে সংগৃহীত সয়াবিন থেকে এ বছর বীজ রাখা যাবে না।' একই বিষয়ে ফেনী বিএডিসির ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আলী মিয়াজী বলেন, 'কমলনগর ও রামগতির ১৫০ জন কৃষকের ৪২০ একর জমি থেকে ১৬৫ টন এবং পার্শ্ববর্তী সুর্বণচর উপজেলার ৫০ জন কৃষকের ২৩০ একর জমি থেকে ৯৫ টন সয়াবিন বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিএডিসির, যা দিয়ে পুরো দেশের বীজ সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা মাত্র ৫ টন বীজ সংগ্রহ করতে পেরেছি। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আগামী মৌসুমে বীজের সংকট থাকবে।'